সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নে করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়া মানুষের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন কৃষক নাজিম সরদার।

ক্ষুধার্ত মানুষের আহাজারি তাকে ভাবিয়ে তোলে। নাজিম সরদার সম্পদশালী নন। তবে তার মায়ের কিছু জমি আছে। অভাবী এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বৃদ্ধা মা মাহফুজা বেগমকে অনুরোধ করেন তিনি। অবশেষে ছেলের অনুরোধে মা এক শতক জমি বিক্রি করেই দাঁড়ালেন অভাবী মানুষের পাশে। কৃষক নাজিম সরদার সখিপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ধোপাডাঙ্গা গ্রামের মৃত. ছবিয়ার রহমানের ছেলে ও সাবেক ইউপি সদস্য।

কৃষক নাজিম সরদার বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এলাকায় মানুষের খুব অভাব। কেউ ভ্যান চালাতে পারছেন না, আবার কেউ দোকান খুলতে পারছেন না। শ্রমজীবী মানুষের কাজ নেই। মানুষের এমন দুর্দশা দেখে আমার খারাপ লেগেছে। আমিও অভাবী মানুষ। ভিটেবাড়ি ছাড়া আমার কোনো জায়গা-জমি নেই। অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করে সংসার চলে আমাদের।

তিনি বলেন, অভাবী এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমার ৭৫ বছর বয়সী মায়ের সঙ্গে আলোচনা করি। পরে মা বলেন, আমি বাবার বাড়িতে এক শতক জমি পাব। ওটা বিক্রি করে মানুষকে সহযোগিতা করতে পারিস। তারপর সাতক্ষীরা সদরের আলীপুর এলাকায় মামার বাড়িতে থাকা এক শতক জমি ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করে দিয়েছি। ২০ বস্তা চাল ৪০ হাজার ৮০০ টাকায় কিনে ধোপাডাঙ্গা এলাকার ১০০ গরিব পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে বিতরণ করেছি। চালের দোকানে ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। এখনও ১০ হাজার ৮০০ টাকা বাকি রয়েছে।

নাজিম সরদারের বৃদ্ধা মা মাহফুজা বেগম বলেন, অসহায় মানুষের সহযোগিতার জন্য ছেলে টাকা দাবি করে। আমি টাকা পাব কোথায়। এরপর বাবার বাড়িতে থাকা এক শতক জমি বিক্রি করে টাকা নাজিমের হাতে দেই। এরপর নাজিম চাল কিনে নিয়ে আসলে ১০০ পরিবারের মাঝে বিতরণ করেছি।

এ বিষয়ে সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ফারুক হোসেন রতন বলেন, সাবেক ইউপি সদস্য নাজিম সরদারের চাল বিতরণ করার বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকেও সরকারের দেয়া খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজিয়া আফরিন বলেন, জমি বিক্রি করে অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী দেয়ার বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছি। কেউ আমাকে বিস্তারিত জানায়নি।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *